মঙ্গলবাসীর পৃথিবী
ওগিলভি : বিখ্যাত জ্যোতির্বিদ। মঙ্গলগ্রহ থেকে আসা বিপদের আভাস সে-ই প্রথম পায় ।ফ্রাঙ্ক : ওয়েলসের ছােট ভাই। লন্ডনের বাসিন্দা। সেও এই বিপর্যয়ের শিকার হয়।ওয়েলস: কাহিনীর মূল চরিত্র। ওগিলভির বন্ধু। তাকে ঘিরেই কাহিনীটি বিবৃত হয়েছে।
হেন্ডারসন : লন্ডনের একটা পত্রিকার সাংবাদিক। ওগিলভি তাকেমঙ্গলগ্রহ থেকেসিলিন্ডার পতনের খবরটা দেয়।সেনা অফিসার : মঙ্গলবাসী প্রাণীদের ধ্বংসের দায়িত্বে নিয়ােজিত এক,ব্যর্থ অফিসার। ওয়েলসের কাছে আশ্রয় নেয়।পাদ্রী : ওয়েলসের মতাে বিপদগ্রস্থ এক ছােট গির্জার পাদ্রী। ওয়েলসের সাথে সে অনেকটা সময় একসাথে থাকে। শেষ পর্যন্ত মঙ্গলবাসী প্রাণীগুলাে তাকে তুলে নিয়ে যায়।
মঙ্গলবাসী প্রাণী : সিলিন্ডারে করে আসা ভয়ংকর প্রাণী। দেখতে খুবইঅদ্ভুত। যুদ্ধযন্ত্রে চড়ে তারা তাপরশ্মি আর কালাে ধোয়া ছেড়ে ধ্বংস করেচলে সবকিছু।বন্ধু ওগিলভির সাথে দেখা থেকে জ্বলন্ত হাইড্রোজেন গ্যাস নির্গত হতে দেখে। এই গ্যাস প্রচন্ড গতিতে পৃথিবীর দিকে ছুটে আসছিলাে। কিন্তু ১৫ মিনিটের মধ্যেই জ্বলন্ত গ্যাসের শিখাটি হঠাৎ অদৃশ্য হয়ে যায়।খবরটা আমার চোখেও পড়েনি। তাই পৃথিবীর ভাগ্যে নেমে আসা বিপদ সম্পর্কে আমি কিছুই জানতাম না। আমার অনে
দিনের পুরনাে বন্ধু ওগিলভির সাথে দেখা না হলে পুরাে ব্যাপারটাই আমার অজানা থেকে যেতাে। ওগিলভি একজন নামকরা জ্যোতির্বিদ। সেদিন বিকেলে ওর সাথে হাঁটতে বের হলে ও প্রসঙ্গটা টেনে আনলাে, “আচ্ছা ওয়েলস,ও মঙ্গলবাগীর পৃথিবী আক্রম ণমঙ্গলগ্রহের ওই গ্যাস বিস্ফোরণের খবরটা নিয়ে তুমি কী ভেবেছাে
?
আমি চমকে গেলাম, কোন খবরটা? পৃথিবী থেকে ৪০ মিলিয়ন মাইলদূরের গ্রহ থেকে কী খবর আসতে পারে?ওগিলভি বললাে, ‘ওই ভয়ানক ও আজব খবরটা তােমার চোখে পড়েনি?কী বলাে! মঙ্গলগ্রহের গাথেকে আলাের শিখা আর বিস্ফোরকের মতাে কিছু একটা ছুটে আসছে।ওর দিকে তাকালাম। বুঝতে পারছিলাম না এই বিষয় নিয়ে ওর সাথেআ লাপে যাবাে কি-না। ওগিলভি বুঝতে পারছে ব্যাপাটারকে আমি মাটেই পাত্তা দিচ্ছি না। বললাে, “আচ্ছা ঠিক আছে তুমি আজ রাতে আমার পর্যবেক্ষণাগারে চলে এসাে। তারপর দুজন মিলে দেখবাে।“অবশ্যই আসবাে।’ বললাম আমি।সেদিন মধ্যরাতে ওগিলভির টেলিস্কোপে চোখ রাখি। হঠাৎ মঙ্গলগ্রহের দিকে এক ঝলক লালচে আলাে চোখে পড়লাে। আমি চেঁচিয়ে বললাম,
আরো পড়ুন,
ওগিলতি, তাড়াতাড়ি এসাে, দেখে যাও।”আমি কখনাে ভাবিনি ওই উজ্জ্বল আলাের শিখা আসলে মঙ্গল থেকে ছোড়া।একটা মিসাইল। মাত্র ২৪ ঘন্টা আগে এই পথেই আরেকটি মিসাইল ছাড়া হয়েছিলাে। পৃথিবীকে টার্গেট করে ছোড়া ওই জিনিসগুলাে যে গতিতে ছুটে আসছে তাতে ৪০ মিলিয়ন মাইল পথ অতিক্রম করে।পৃথিবীকে ধ্বংস করতে খুব বেশি সময় লাগবে না।ঘন্টাখানেক পর ওগিলভি
টেলিস্কোপে চোখ রেখে বললাে, তার মানেও য়েলস্, মঙ্গলগ্রহ থেকে কেউ কি আমাদেরকে সংকেত দিচ্ছে?আমি মুখ টিপে হাসলাম। কিন্তু অন্ধকার ঘরে সেই হাসি ওর চোখে পড়লাে না।
কী যে আবােল-তাবােল বললা! মঙ্গলগ্রহ থেকে কে সংকেত পাঠাবে?আমার মনে হয় মঙ্গলের আকাশে কোনাে বড় তারা খসে পড়েছে কিংবামঙ্গলগ্রহে কোনাে আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত হচ্ছে।’ওগিলভি বললাে, তুমি মঙ্গলগ্রহে কোনাে প্রাণীর অস্তিত্ব মানতে পারছােকেনবলতাে’অদ্ভুত এক আলাের বিস্ফোরণ ওওগিলতি,তাড়াতাড়ি এসে দেখে যাও।‘ওখানে প্রাণীর অস্তিত্বের সম্ভাবনা দশ লক্ষ ভাগের এক ভাগ । ভুলে যাচ্ছাে কেন, সূর্য থেকে মঙ্গলগ্রহের দূরত্ব ১৪০ মিলিয়ন মাইল । মঙ্গল যেআলাে ও তাপ পায় তা পৃথিবীর অর্ধেক। এতে কোনাে মানুষ বাঁচতে পারে। মঙ্গলগ্রহের
আবহাওয়া দিন দিন বেশি শীতল হয়ে যাচ্ছে।’কিন্তু ওখানে তাে পানি এবং বাতাস আছে।’থাকতে পারে …থাকতে পারে। তবে আমাদের পৃথিবীর মতাে এত আধুনিক নয়.. কোনাে ভাবেই নয়। মঙ্গলবাসীর পৃথিবী আক্রমণ ওরা পৃথিবীকে সবসময় শত্রুর চোখে
দেখে আসছে,সেই রাতে আমি কি জানতাম পৃথিবীর মানুষের চেয়েও বেশি বুদ্ধিমানপ্রাণী মঙ্গলগ্রহে আছে, মানুষের মতােই ওরা মরণশীল। মানুষ এখনােচিন্তা করতে পারেনি এমন যন্ত্রপাতি এবং ভয়ংকর আগ্নেয়াস্ত্র যারা তৈরিকরে রেখেছে, ওরা পৃথিবীকে সবসময় শত্রুর চোখে দেখে আসছে, স্বপ্নদেখছে তাদের বিপদসংকুল গ্রহ থেকে পৃথিবী নামক একটি শান্তিপূর্ণ সবুজ-শ্যামল-উর্বর গ্রহটিকে দখল করে নেবে!পৃথিবীর অন্যান্য পর্যবেক্ষকরা মঙ্গলগ্রহে ওই আলাের বিস্ফোরণটাকে পর অদ্ভুত এক আলোর বিস্ফোরণ না মঙ্গলগ্রহ থেকে ছোঁড়া মিসাইলটি….. ..পর দশরাত ধরে ‘দেখতে পেলাে
কিন্তু দশ রাত পর হঠাৎ কেন ওটা-থেমে গেলাে, সেই ব্যাখ্যা আর কেউ খোঁজার চেষ্টা করেনি।মঙ্গলগ্রহ থেকে ছোঁড়া মিসাইলটি প্রতি মুহূর্তে কয়েকমাইল বেগে ছুটে আসছিলাে পৃথিবীর দিকে । অথচ পৃথিবীর মানুষ তার কিছুই বােঝেনি।নিত্যদিনের কাজ নিয়ে ব্যস্ত থেকেছে ! এতবড় একটা ধ্বংস এবং বিপর্যয় যে প্রতি মুহূর্তে এগিয়ে আসছে তার কোনাে খবরই তারা জানে না। তারাএটাকে ভেবেছে মঙ্গলের আকাশের গায়ে কতগুলাে উল্কাপিন্ডের পতন।১০ মঙ্গলবাসীর পৃথিবী আক্রমণএকটা আলাের রেখা শাে শাে শব্দ করে ছুটে আসছে।
,২. মঙ্গলগ্রহবাসীর পৃথিবীতে আগমন
আকাশের একটা আলাের রেখাঁ শাে শাে শব্দ করে ছুটে আসছে উল্কাপিন্ডের পেছনে সবুজ আলাের একটা লাইন। শেষ পর্যন্ত এক রাতেসেটা পৃথিবীতে এসে পড়লাে। সবাই ধরে নিয়েছে ওটা নেহায়েতইউল্কাপতন।মঙ্গলগ্রহবাসীর পৃথিবীতে আগমন ১১আর কেউ পাত্তা না দিলেও ওগিলভি ঠিকই গুরুত্ব দিয়েছিল। উষ্কাপিন্ডের পতন লক্ষ করে সে এগিয়ে গেলাে খােলা প্রান্তরের দিকে। হরসেল,শােবাম এবং ওকিং শহরের মাঝে ওই জায়গাটা। একটা বালির গর্তের কাছে পড়ে আছে যন্ত্রটি।প্রচন্ড বেগে পড়ায় একটা বিশাল গর্ত তৈরি হয়ে গেছে। গর্তের
চারপাশে নুড়ি আর বালির একটা স্তুপ হয়ে গেছে। প্রায় মাইলখানেক দূরেও ছিটকে।পড়েছে বালি আর নুড়ির কণা। গর্তের চারপাশের সবুজ ঝােপঝাড়ে।আগুন জ্বলছে। জিনিসটার প্রায় পুরােটাই ঢুকে গেছে বালির গর্তে।ওগিলভি ধীরে ধীরে বালির গর্তের মুখে এসে উকি দিলাে জিনিসটার,উপরের অংশ খানিকটা খােলা। মনে হচ্ছে ওটা ৯০ ফুট আয়তনের এক,বিশাল গ্যাস সিলিন্ডার। ওটার গায়ে সবুজ ধরনের আস্তরণ। জিনিসটা,এখনও অনেক উত্তপ্ত বলে কাছে যেতে পারলাে না ওগিলভি |
ভােরের আলােয় দাঁড়িয়েছিলো গিলভি। হঠাৎ তার মনে হলােসিলিন্ডারের ভেতর থেকে কিসের যেন নড়াচড়ার শব্দ কানে আসছে। সে,ভেবেছিলাে সিলিন্ডারটার উত্তপ্ত খােলস শীতল হবার শব্দ ওটা। কখনও,মাথায় আসেনি জিনিসটার ভেতর ফাকা হতে পারে।হঠাৎ সিলিন্ডারের খােলা অংশের গা থেকে ধূসর আস্তরণ খসে পড়তে শুরুকরলাে। খটকা লাগলাে ওগিলভির। সিলিন্ডারের খােলা অংশ থেকে,আস্তরণ খসে পড়ছে কেন? ওটা শীতল হতে থাকলে তাে পুরােসিলিন্ডারের গা থেকেই আস্তরণ খসে পড়ার কথা।তারপর দেখলাে সিলিন্ডারের মাথার গােল ঢাকনার মত অংশ ধীরে ধীরে,ঘুরছে। হঠাৎ ঝাকি খেলে পুরাে সিলিন্ডারটা।
‘সর্বনাশ! সিলিন্ডারটা দেখছি ফাকা। ভেতরে কে বা কী যেন ওটা খুলেদিচ্ছে। নিশ্চয়ই ভেতরে ওরা মৃতপ্রায় অবস্থায় আছে এবং বাঁচার জন্যেবেরিয়ে আসার চেষ্টা করছে। কোত্থেকে এসেছে ওগুলাে? হঠাৎ মনেপড়লাে মঙ্গলগ্রহে উজ্জ্বল আলাের বিস্ফোরণের সেই দৃশ্যের কথা।
১২ মঙ্গলবাগীর পশিৰী আক্রমণ জিনিসটার প্রায় পুরােটাই ঢুকে গেছে বালির গর্তে,নিশ্চয়ই ফাদে ফেলে সিলিন্ডারের ভেতরে আটকে দেয়া হয়েছে কাউকে।ওদেরকে মুক্ত করতেই হবে।উত্তাপের কথা ভুলে গিয়ে ওগিলভি বালুর গর্তে নেমে গেলাে,সিলি ঘােরানাের জন্য।কিন্তু হাত পুড়ে যাবার মুহূর্তে সরেএলাে সে। কয়েক মুহূর্তের জন্যে আতঙ্কে জমে গেলাে। তারপর এক চিৎকারে ছুটে বেরিয়ে এলাে বালির গর্ত থেকে। ওকিং এর দিকে।মঙ্গলগ্রহবাগীর পৃথিবীতে আগমন